আজকে আমি আপনাদের জন্য এমন একটি বইয়ের সামারি লিখব যে বইটি হাজার বছরের পুরোনো কিন্তু ওই বইয়ের শিক্ষাগুলো এতটাই গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর যে, আজও অনেক মানুষ এই বইটি পড়ে শিক্ষা নেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকে। কিছু কিছু দেশ এই বইটি তাদের মিলিটারি সিলেবাসেও রেখেছেন। আমি আজকে যে বইটির সামারি লিখছি সে বইটির নাম “দ্য আর্ট অফ ওয়ার” এই বইটি মূলত মিলিটারি স্ট্র্যাটেজি শিখার জন্য লিখা হয়েছিল। এখন আপনি চিন্তা করতে পারেন যুদ্ধ বিষয়ক একটি বইয়ের সামারি আমি আপনার সাথে কেন শেয়ার করছি। আপনার এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে এই বইয়ের কথাগুলি শুধু যুদ্ধের জন্য নয়,বইয়ের কথা গুলো আমাদের বাস্তব জীবনে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনি বিশ্বাস করেন আর নাই করেন আমাদের জীবনের লক্ষ্য পূরণ করার জন্য আমাদেরকে প্রতিদিনই ছোট ছোট যুদ্ধ করে যেতে হয় । আর এজন্যই আমি আপনাদের জন্য এই বইয়ের শিখানো পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট তুলে ধরব যা আমাদেরকে নিজেদের জীবন যাপন করতে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতি করতে সাহায্য করবে।
কখন লড়াই করতে হবে এবং কখন নয়

যুদ্ধের ভাল ফলাফল হচ্ছে জয় লাভ করা কিন্তু আপনি যদি যুদ্ধ না করে জিততে পারেন তাহলে ব্যাপারটা আরো ভালো। মনে করুন একটি স্কুলে ক্রিকেট খেলার আয়োজন করা হয়েছে খেলার এক পর্যায়ে দুই গ্রুপের তর্কাতর্কিতে সংঘর্ষ বেধে গেল এক গ্রুপের ছেলেরা অন্য গ্রুপের ছেলেদেরকে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে আঘাত করতে লাগলো হঠাৎ একটি ছেলের মাথায় অনেক জোরে আঘাত লাগার কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হলো কিছুদিন পর সে মারা গেল । শুধু একটি খেলাকে কেন্দ্র করে দুইটা জীবন খারাপ হয়ে গেল । একজন ক্রিমিনাল হয়ে গেল আর অন্যজন মারা গেল। আপনি অনেকবার দেখে থাকবেন মানুষ অনেক ছোট ছোট ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া শুরু করে দেয়। একজনের সাথে আরেকজনের ধাক্কা লাগল আর শুরু হয়ে গেল গালিগালাজ, সোশ্যাল মিডিয়ার স্ট্যাটাস দেখে কমেন্ট বক্সে বকাজকা শুরু, এরকম অবস্থা দেখে মনে হওয়াটা স্বাভাবিক মানুষ ঝগড়া-ঝাটি মারামারি করার জন্যই তৈরি থাকে । মানুষ এটা বুঝতে চায় না যে ঝগড়া বেশিরভাগ সময় তাদের ক্ষতিটাই করে সেটা যেই রকম ঝগড়া অথবা লড়াই হয়ে থাক না কেন । হতে পারে এটা দুইটা মানুষের সাথে ঝগড়া অথবা হতে পারে দুইটা দেশের সাথে। খেয়াল করলে দেখবেন ঝগড়াঝাঁটি অথবা মারামারিতে তিনটা জিনিস ব্যবহার করতে হয় সময় , টাকা এবং এনার্জি ।এই তিনটা জিনিস ঝগড়াঝাটি , মারামারিতে ব্যবহার না করে অনেক ভালো কাজেও ব্যবহার হতে পারত যা সবাইকে অনেক ভালো রেজাল্ট এনে দিতে পারতো । মনে রাখবেন ওই মানুষটা বুদ্ধিমান অথবা সচেতন নয় যে নিজের ইগো স্যাটিসফেকশন এর জন্য মারামারি, ঝগড়া ঝাটিশুরু করে দেয়। একজন স্মার্ট এবং বুদ্ধিমান মানুষ সেই হয় যে যুদ্ধ না করেই জিতে যায় । প্রকৃত বুদ্ধিমান যতক্ষণ দরকার না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত লড়াই ঝগড়া ঝাটি থেকে দূরে থাকে।
আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে বিবেক দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শিখুন
ক্রিকেট এবং অন্যান্য খেলার মাঝে আপনি হয়তো দেখে থাকবেন যখন কোন টিমের প্লেয়ার খুব ভালো খেলতে শুরু করে অন্য টিমের প্লেয়াররা ভালো খেলা টিমের প্লেয়ারদের কে রাগানোর জন্য অনেক আজেবাজে কথা বলে রাগানোর চেষ্টা করে। কারন তারা খুব ভালো করে জানে যদি কোন খেলোয়াড় রেগে যায় তাহলে তার ভুল করার সুযোগ অনেক বেড়ে যায় যাতে করে তাদের লাভ হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি । এজন্যই ওই সমস্ত প্লেয়ারদের কে অনেক ভাল মনে করা হয় যারা ঠান্ডা মাথায় খেলা সমাপ্ত করে আসতে পারে । আপনার খেয়াল রাখা উচিত মানুষ যেন আপনার আবেগ নিয়ে না খেলতে পারে। যদি খেয়াল করে দেখেন দেখবেন বেশিরভাগ বিজ্ঞাপনদাতারা আমাদের ইমোশন টার্গেট করে বিজ্ঞাপন প্রচার করে কারণ বিজ্ঞাপনদাতারা ভালো করেই জানে মানুষের আবেগে যদি একবার সাড়া ফেলা যায় তাহলে তাদের প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস বেশি বিক্রয় করা সম্ভব। কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে মনে রাখবেন আপনাকে সিদ্ধান্ত আবেগ নয় বরং বিবেক দিয়ে চিন্তা ভাবনা করে নেয়া উচিত। আমরা যখন ইমোশনাল থাকি তখন আমাদের ভুল সিদ্ধান্ত নেয়ার সম্ভাবনা বেশি। যা আমাদেরকে মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পারে । প্রতিদিন নিজের আবেগের সাথে লড়াই করাটা একটা যুদ্ধ। কিন্তু জিতবে সেই ব্যক্তি যে নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রন করতে পারে এবং ওই মানুষটার হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি যে মানুষটার ইমোশন তাকে নিয়ন্ত্রন করে ।
নিজের এবংপ্রতিপক্ষ সম্পর্কে জানুন

মানুষের জীবনে ব্যর্থ হওয়ার অনেক কারণ আছে এই কারণগুলোর ভিতরে সবথেকে বড় দুটি কারণ হচ্ছে
1/ নিজের সম্পর্কে না জানা
2/ প্রতিপক্ষ সম্পর্কে না জানা ।
ইন্টারভিউর উদাহরণ দিয়ে যদি বলি: মানুষ যখন ইন্টারভিউ দিতে যায় অনেক সময় এটাও জানার চেষ্টা করে না সে যে কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছে ওই কোম্পানির মূল লক্ষ্যটা কি, ওই কোম্পানি কী করে থাকে। তাকে নিয়োগ করার মাধ্যমে ওই কোম্পানি কী অর্জন করতে চাচ্ছে এবং সে কিভাবে কোম্পানির লক্ষ্য পূরণ করতে সহযোগিতা করতে পারবে। এসকল বিষয় না জানা আমাদের জন্য ভালো কোন খবর হতে পারে না। দুঃখের বিষয় হচ্ছে অনেক সময় আমরা আমাদের নিজের সম্পর্কে জানিনা । উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে ইন্টারভিউতে জিজ্ঞেস করা কমন একটি প্রশ্ন হচ্ছে নিজের সম্পর্কে বলুন । দুঃখের বিষয় অনেক মানুষ এই সাধারন একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না। অনেক সময় আমরা আমাদের নিজের সম্পর্কে পাঁচ মিনিট কথা বলার সামর্থ্য রাখিনা। অনেক সময় আমাদের এটা ও জানার থাকেনা আমরা কোন বিষয়ে ভালো কোন বিষয়ে খারাপ। এর থেকে খারাপ বিষয় হচ্ছে আমরা অনেক সময় এই প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করি না। আবার আমরা এটা ভেবে হতাশ হই আমরা কেন সফল হচ্ছি না। কিভাবে মিলবে সাফল্য যদি আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকি।আমি কে আমি কি করতে পারি আমি কোন বিষয়ে ভালো কোন বিষয়ে খারাপ আমি কার সাথে কম্পিটিশন করছি । সফল হওয়ার জন্য সবার আগে নিজেকে ভালোভাবে জানুন আপনার স্ট্রং পয়েন্ট এবং উইক পয়েন্ট সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন এবং গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কারো সাথে কোন ডিল করার আগে তার সম্পর্কে যত বেশি সম্ভব হয় ইনফরমেশন কালেক্ট করার চেষ্টা করুন এই বিষয়গুলি আপনাকে জিততে এবং সফল হতে অনেক বেশী সাহায্য করবে ।
লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করুন

এখনকার সময়ে সবাই চায় আপনার মনোযোগ পেতে আপনার বন্ধু থেকে শুরু করে বড় বড় কোম্পানি পর্যন্ত যারা কোটি টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন দিয়ে আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করতে চায়। কেন? কারণ আপনার মনোযোগ অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করার মাধ্যমে তাদের অর্থ উপার্জন করার সম্ভাবনা থাকে । মনে রাখা উচিত কোম্পানিগুলো আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করছে তাদের লাভের জন্য কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে তাদের লাভ হওয়াটা অনেক সময় আমাদের ক্ষতির কারণ হতে পারে ।উদাহরণস্বরূপ বলা যায় আপনি যখন মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করছেন। অনেক সময় আপনার বন্ধু আপনাকে কল করে আড্ডা দেয়ার কথা বলবে , টেলিভিশনে খুব সুন্দর একটা অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে , অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুকে বসে থাকবেন। মানে আপনি আপনার লক্ষ থেকে সরে যাওয়ার অনেক মাধ্যম খুঁজে পাবেন । আপনি যদি সবকিছু একপাশে সরিয়ে আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিশ্রম করে যেতে পারেন তাহলে আপনার জীবনে সাফল্য আসবেই ।
প্রতিপক্ষ আসার আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন

আচ্ছা আপনি কি এই গল্পটা পড়েছেন “The Ant And The GraceHoper” গল্পটা এরকম একদিন ঘাসফড়িং খাওয়া-দাওয়ার খেয়ে গান গাইতে গাইতে মজা করছিল ঠিক সেই সময়ে সে লক্ষ্য করলো অনেকগুলা পিঁপড়া খাবার নিয়ে কোথাও যেন যাচ্ছে ঘাসফড়িং একটা পিপড়া কে জিজ্ঞেস করল যে তোমরা এতো খাবার নিয়ে কোথায় যাচ্ছো । পিঁপড়ে উত্তর দিলো আমরা শীতকালের জন্য খাবার মজুদ করছি কারণ বরফ জমা শুরু করলে খাবার ম্যানেজ করতে অনেক কষ্ট হয়ে যাবে সুতরাং এখনই খাবার মজুদ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে । তোমারও ঠিক এরকমটাই করা দরকার। ঘাসফড়িং তাদের কথায় উপহাস করতে লাগলো সে পিঁপড়াদের কে বলল তোমরা কাজ করতে থাকো এখনো অনেক সময় বাকি আছে আমি পরে জমা করব। এরকমটা বলে সে গেল। কয়েক মাস পর ঠান্ডা আসার আগ মুহূর্তে ঘাসফড়িং এর সাথে পিঁপড়াদের আবার দেখা হল ঘাসফড়িং দেখল পিঁপড়ারা খাবার নিয়ে যাচ্ছে পিঁপড়ারা ঘাসফড়িং কে বললো শীত চলে আসতেছে খাবার মজুদ করো । কিন্তু ঘাসফড়িং তাদের কথা এখনো মানতে নারাজ বরং সে বলল সে শীতের সময় নিজের খাবার ম্যানেজ করে নিবে তোমরা তোমাদের চিন্তা করো। যখন ফাইনালি ঠান্ডা চলে আসে পিঁপড়ারা তাদের ঘরে বসে আরাম করে খাবার খায় কিন্তু অন্যদিকে ঘাসফড়িং অনেক পরিশ্রম করার পরেও তার জন্য খাবার জোগাড় করা সম্ভব হয় না। সে নিজের এই অবস্থা দেখে কান্নাকাটি শুরু করতে থাকে এবং মনে মনে বলতে থাকে ইস যদি পিঁপড়াদের কথা মেনে কিছু খাবার মজুদ করে রাখতাম তাহলে আজকে এত কষ্ট করতে হত না। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিল। বেশিরভাগ মানুষ এই ঘাসফড়িং এর মতই যারা ম্যাক্সিমাম কাজ একেবারে শেষ মুহূর্তেই করে । ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত না থাকা খারাপ সময়ের জন্য টাকা-পয়সার সঞ্চয় করে না রাখা। ভবিষ্যতে সুস্থ থাকার জন্য নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল না রাখা ওই সমস্ত ব্যক্তিরা কখনো সফল এবং খুশি থাকতে পারে না। মনে রাখবেন আপনাকে যদি সফল হতে হয় তাহলে যত বেশি সম্ভব ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হয়ে থাকতে হবে। যদি আপনি ভবিষ্যতের জন্য তৈরি থাকেন ব্যাপারটা আপনাকে খুশি রাখবে এবং অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবে ।
উপরে লেখা কথা গুলো ‘দ্য আর্ট অফ ওয়ার’ বই থেকে লিখেছি,
এই বই আমাদেরকে খুব মূল্যবান কিছু শিক্ষা দেয় যা ফলো করে আমরা জীবনে অনেক উন্নতি করতে পারি।
Reference