বেশিরভাগ মানুষই নিজের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। তারা সবাই ভাবে তাদের জীবনটা আরো বেশি সুন্দর হতে পারতো কিন্তু এই জন্য তারা কিছুই করেনা। আপনি যদি আপনার জীবনটাকে পরিবর্তন করতে চান তাহলে আপনার জীবন যাপনের প্রতিটা স্তরে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। প্রথমেই পুরনো বদ অভ্যাসগুলোকে ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে। আর নতুন নতুন ভালো অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
এই ভালো অভ্যাসগুলোই আপনার জীবন বদলে দিবে।
আমাদের জীবন আসলে খুবই ছোট আর এজন্যই এতোটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন এই ছোট্ট জীবনে সবাই চায় সুখী হতে আর উপভোগ্য একটি জীবন কাটাতে কিন্তু সবাই তা করতে পারে না। কেন করতে পারে না সেটা নিয়ে আজ আমরা কথা বলবো না আমরা আজ জানবো কিভাবে খুব ছোট ছোট কিছু কিছু অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসা সম্ভব।
অনেকের অনেক ধরনের অভ্যাস থাকতে পারে। যেমন: কথা কম অথবা বেশি বলা, রাত জাগা, বেশি খাওয়া ইত্যাদি। কিন্তু অভ্যাসের মধ্যে ভালো খারাপ দুটোই আছে। এমন কিছু অভ্যাস আছে যেগুলো আপনি আয়ত্ব করলে অতি সহজেই একটি সুন্দর ও উপভোগ্য জীবন কাটিয়ে দিতে পারবেন।
আজ আমরা তেমনি কিছু অভ্যাস নিয়ে আলোচনা করব।
চলুন শুরু করা যাক:
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠবেন

আজকাল খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠার সবার জন্য বেশ কঠিন। বেশিরভাগ মানুষই এখন অনেক দেরি করে ঘুম থেকে উঠে কিন্তু এটা অন্যতম স্বীকৃত খারাপ অভ্যাস। তাই সর্বপ্রথম আপনাকে ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে হবে। ঘুম থেকে উঠে সর্বপ্রথম আপনার বিছানা ঠিক করবেন। এরপর যাবতীয় কাজ সেরে কিছুক্ষণ ব্যায়াম করা শুরু করবেন। সকালের ব্যায়াম অনেক বেশি উপকৃত করবে আপনাকে। নিজের বাসার পাশে অথবা খোলামেলা কোন জায়গায় বা পার্কে চলে যান। কিছুক্ষণ ব্যায়াম করে আবার বাসায় ফিরে স্বাস্থ্যকর নাস্তা করুন। এভাবে কয়দিন করলেই দেখবেন আপনি আগের তুলনায় নিজের স্বাস্থ্যে অনেক বেশি পরিবর্তন দেখবেন।
বাস্তবসম্মত একটা রুটিন করুন

আমরা রুটিন মেনে চলায় অনেক বেশি উদাসীন। কিন্তু যদি রুটিন মেনে মেনে কাজ করা যায় তাহলে কাজের প্রতি আমাদের ভালোলাগা বজায় থাকে আর কাজটাও ঠিকমতো সম্পন্ন করা যায়। এখন আপনার উচিত হবে এমন একটি রুটিন বানানো যেটা আপনাকে বিরক্ত করবে না। যদি নিজেরই ভালো না লাগে তাহলে আপনি সেটি মেনে চলতে পারবেন না। এমন একটি রুটিন বানান যেখানে আপনি আপনার পর্যাপ্ত অবসর পাবেন।
সারাদিনের একটা রুটিন থাকলে আর দিন শেষে একটা চেকলিস্ট থাকলে সেখানে আপনার কতটুকু কাজ সম্পন্ন হয়েছে আর কতটুকু বাকি আছে সেটা বুঝতে পারা যাবে।
অনেক বেশি বই পড়ুন

বই আমাদের সবচেয়ে ভালো বন্ধু এই কথা সবাই স্বীকার করবে। কিন্তু আমাদের বর্তমান অবসরে বেশিরভাগ সময়ে আমরা ইন্টারনেট কিংবা গেমিংয়ের ব্যয় করি। এতে শুধু আমাদের সময়ের অপচয় হয়। আমরা যদি ওই সময়টা একটা ভালো বই পড়ার পেছনে দেই তাহলে ওই বই থেকে আমাদের অনেক বেশি জানা সম্ভব। কিন্তু এর মানে এটা নয় যে ইন্টারনেট একেবারেই বাদ দিতে হবে, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা অন্যান্য বিনোদন আপনার প্রয়োজন কিন্তু সেটা কোনভাবেই মাত্রার বেশি নয়।
ভালো বই আপনার মধ্যে ক্রিয়েটিভিটি তৈরি করবে এর পাশাপাশি আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে। রাতে ঘুমানোর আগে একটা ভালো বই পড়লে আপনি ভালো ঘুমাতে পারবেন। সাধারণত নন ফিকশন বইগুলো অনেক বেশি উপকৃত করবে আপনাকে। তাই কিছু ভালো ভালো বই সিলেক্ট করে একটা লিস্ট তৈরি করুন, যেটা আপনি নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করার প্লান করবেন।
অসুখী মানুষদের সঙ্গ ত্যাগ করুন

আপনি আশেপাশে তাকালেই দেখবেন অনেক মানুষ আছে যারা সারাক্ষণ নিজেদের নানা রকম অভিযোগ নিয়ে নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করতে থাকে। কিন্তু এতে তাদের কোন লাভ হয় না বরং এতে করে আপনার মধ্যে কিংবা আশেপাশে অন্যান্যদের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণ নেগেটিভিটি তৈরি হয়। এই নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা গুলো আপনার মধ্যে ডিপ্রেশন তৈরি করতে পারে। তাই এইরকম মানুষগুলোকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন তাদেরকে আবার জীবনের গতিতে ফিরে আসার আহ্বান জানাবেন, যদি এতে কাজ না হয় তাহলে যতটা সম্ভব তাদের সঙ্গ এড়িয়ে চলুন। এতে করে আপনার মধ্যে যে পজেটিভ মানসিকতা তৈরি হবে সেটা আপনার সুখে থাকা কে অনেক বেশি সহজ করে দেবে।
মনোযোগ দিয়ে মানুষের কথা শুনুন

খন মানুষ বলে বেশি শোনে কম এতে করে অনেক কথাই ঠিকমতো না শোনাই থেকে যায়।
একটি ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে আমাদের প্রয়োজন ভালো কমিউনিকেশন। ভালো কমিউনিকেশন তৈরি করার জন্য সবার আগে আপনাকে মনোযোগী শ্রোতা হতে হবে। কারণ মানুষের কথা শোনাই কমিউনিকেশন এর মূল প্রতিপাদ্য।
আপনার আশেপাশের মানুষ কি বলছে তা ভালো করে শুনুন এবং বোঝার চেষ্টা করুন। এতে শুধু ওই মানুষটি সন্তুষ্ট হবে না বরং এর পাশাপাশি আপনি তাকে ভালো করে বুঝতে পারবেন এবং তার সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা আপনার তৈরি হবে। এই ধারণা আপনার সাথে ঐ মানুষের সম্পর্ক নির্ধারণে সাহায্য করবে। একজন ভালো মানুষ হওয়ার জন্য ভালো শ্রোতা হওয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
অর্থ সঞ্চয় করুন

টাকাপয়সা অনেক বেশি মূল্যবান একটি জিনিস, এটাকে অযথা খরচ করে নিজের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তায় ফেলবেন না। অর্থ সঞ্চয় করার জন্য আপনার যেটুক খরচ করা প্রয়োজন শুধু তা করবেন। এর জন্য হয়তো অনেক বিলাসিতা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। আপনাকে বুঝতে হবে এই সামরিক বিলাসিতা আপনার ভবিষ্যৎ বিড়ম্বনার কারন হবে। তাই আগে থেকে ঠিক করে ফেলুন যে কতটুকু খরচ করবেন। যেমন আপনি হয়তো এখন বাজারে যাবেন বাজারে গিয়ে কি কি কিনবেন এবং কতটুকু কিনবেন তা বিস্তারিত একটি লিস্ট করে ফেলুন। এ লিস্টের বাইরে অতিরিক্ত খরচ করা থেকে বিরত থাকুন। এই ধরনের অভ্যাস করতে পারলে এটা আপনাকে অতিরিক্ত খরচ থেকে রক্ষা করবে।
কথা দিয়ে কথা রাখুন
কাউকে কোন প্রতিজ্ঞা দিলে তা রক্ষা করার চেষ্টা করবেন, সেটা খুব সামান্য কিছু হলেও। এমন কিছু নিয়ে প্রতিজ্ঞা করবেন না যেটা আপনি রক্ষা করতে পারবেন না।আপনি যদি ঠিকমতো আপনার কথা রাখতে পারেন তাহলে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে পারবেন, আর আশেপাশের মানুষের বিশ্বাস অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস।
সময়ের সঠিক ব্যবহার করুন

সময় সবচাইতে দামি জিনিস, আর এই দামি জিনিসের সবচেয়ে উত্তম বা ভাল ব্যবহার শিখতে পারা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে শিখে যান তাহলে আপনার জীবন অনেক বেশি গোছালো হবে এবং দুঃখ কষ্টের মাত্রা কমে যাবে। সময়ের কাজ সময়ে করার কারণে আপনি নিজেকে একটা ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে পারবেন।অবসর এর জন্য দিনের কিছু অংশ রেখে বাকি সময়টা কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন।নিজের সাথে নিজের চ্যালেঞ্জ নিন কোনভাবেই সময় অপচয় করবেন না। তাহলেই দেখবেন আপনার জীবন অনেকাংশে পরিবর্তন হয়ে গেছে।
উপরোল্লিখিত এই অভ্যাসগুলো ছাড়াও আরো অনেক অভ্যাস আছে যেগুলো খুব সহজে আপনার জীবন পরিবর্তন করে দিবে, এরকম আরো কিছু অভ্যাসের কথা নিচে সংক্ষেপে দেওয়ার চেষ্টা করছি-
- নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খান ও পানি পান করুন। নিজের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখুন কারণ স্বাস্থ্যই সম্পদ।
- রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস করুন এতে করে পরের দিন আপনার কাজ করা সহজ হবে।
- পরিমাণ মতো বিশ্রাম নিন, এটা আপনার কাজের গতি বাড়িয়ে দিবে।
- মেডিটেশন করার অভ্যাস করুন, এতে আপনার গতিময় জীবন এর স্ট্রেস কমে যাবে।
- প্রতিদিন কি করেছেন আর কি করার কথা ছিল কিংবা পরদিন কি করবেন সে সম্পর্কে ডাইরিতে লিখার অভ্যেস করুন।
- নিজের প্রিয়জনদের সাথে ভালো সময় কাটান।
- ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার চেষ্টা করুন, এতে আপনার মানসিক প্রশান্তি অর্জিত হবে।
আপাতত অভ্যাস গুলো আয়ত্ত করে মেনে চললে আপনার জীবন ভালো দিকেই পরিবর্তিত হবে।
খুব ভালো লাগলো ।