একজন উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন ক্যারিয়ারের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত।একটি সফল প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা কখনোই ভাগ্যের উপর নির্ভর করে না। এটি করার জন্য প্রয়োজন হয় সুন্দর একটি আইডিয়া এবং নিরলস পরিশ্রম, আর প্রতিটা উদ্যোক্তার যাত্রা শুরু হয় সংগ্রাম এবং চ্যালেঞ্জ দিয়ে। উদ্যোক্তা হতে চাই এই ব্যাপারটা এতটাই জনপ্রিয় যে ও,এস,ডি ২0১৫ এর গবেষণায় দেখা গেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৫৮ শতাংশ নারী ঝুঁকি নিয়ে নিজেদের ব্যবসা গড়ে তোলার জন্য ইচ্ছুক,সুতরাং আপনার স্টার্টআপটি ভালোভাবে শুরু করতে আপনাকে কি কি পদক্ষেপ নিতে হবে তা জেনে নিতে হবে।
তাই আসুন এই পোস্টে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার সঠিক পদক্ষেপ গুলো জেনে নেই, পাশাপাশি আমরা বিখ্যাত উদ্যোক্তাদের পরামর্শগুলি এবং তাদের কাছ থেকে কি কি শিখতে পারি তা নিয়ে আলোচনা করব।
সফল উদ্যোক্তা হতে আসলে কি লাগে?
আসুন বিখ্যাত উদ্যোক্তাদের কাছ থেকেই জেনে নিই।
তার পূর্বে একটা বিষয় স্মরণীয়, তা হলো,
আপনি যদি সফল উদ্যোক্তাদের উক্তিগুলো আপনার ডেস্কে রাখেন তাহলে আপনি তাদের প্রতিটি উদ্যোগকে কল্পনা করতে পারবেন। তাদের অনুপ্রেরণাদায়ক উক্তি গুলো আপনাকে অনেক উচ্ছ্বসিত করবে এবং আপনার উদ্যোগকে সফল করার জন্য আপনি আরো বেশি উৎসাহ বোধ করবেন। সুতরাং, আমরা একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয়ে আজ কী শিখতে পারি? দেখা যাক-
ওয়াল্ট ডিজনি

“কিছু শুরু করার উপায় হল কথা কম বলে কাজটি শুরু করে দেয়া”
আপনার সব থেকে ভালো লাগার বিষয়টিই আপনাকে শুরু করতে হবে এমনটি নয়, তবে সফল উদ্যোক্তা হতে গেলে আপনাকে অবশ্যই আপনার ভালোলাগার বিষয়টিকে মূল্যায়ন করতে হবে। আপনি যাই শুরু করেননা কেন অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় আসবে যা আপনাকে আপনার স্বপ্নের উদ্যোগ থেকে ছিটকে ফেলে দিতে চাইবে। এটি একটি সাধারণ সংগ্রাম প্রায় প্রত্যেক উদ্যোক্তার সাথেই এমনটি হয়। আপনি যেই রকম খারাপ অবস্থার ভিতরেই থাকেন না কেন আপনাকে মনে রাখতে হবে এই খারাপ অবস্থার ভিতর আপনি একা পড়েন নি, প্রত্যেকটা সফল উদ্যোক্তাই খারাপ সময়টা ওভারকাম করে সফল হয়েছে।
আপনার উদ্যোগ শুরু করার জন্য “জিগ জিগ্লারের” এই শব্দগুলো আপনাকে আরো বেশি অনুপ্রেরণা দিবে,
“আপনাকে শুরু করতে দূর্দন্ত হতে হবে না তবে আপনাকে দুর্দান্তভাবে শুরু করতে হবে”
বিশ্বের শীর্ষ উদ্যোক্তাদের নিয়ে F4S ২0 বছরের গবেষণায়, এটি আবিষ্কার করা হয়েছিল যে সফল উদ্যোক্তারা তাদের উদ্যোগকে কার্যকর করতে সাধারণ মানুষের থেকে ৪0 শতাংশ বেশি অনুপ্রাণিত।
জিগ জিগ্লার

“আপনাকে শুরু থেকেই দূর্দান্ত হতে হবে না তবে আপনাকে দূর্দান্তভাবে শুরু করতে হবে”
সফল উদ্যোক্তাদের জন্য এটি আরেকটি দারুণ উক্তি। আপনি যদি গন্তব্য ঠিক না করে যাত্রা শুরু করেন এটি হবে চরম বোকামি। আপনি কোথাও না কোথাও গিয়ে শেষ করতে পারবেন কিন্তু এটি কখনোই আপনার অ্যাকচুয়াল গন্তব্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে না। শুধু আপনার সময় নষ্ট করবে এর বিপরীতে আপনি যদি একটি পরিষ্কার লক্ষ্য নির্ধারণ করেন এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিশ্রম করেন আপনি যা চান তা খুব সহজেই অ্যাচিভ করতে পারবেন। বিনিয়োগ বিজ্ঞানের মতে, লক্ষ্য নির্ধারণ না করে এগিয়ে যাওয়ার চেয়ে লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগিয়ে যাওয়া আপনাকে দশগুণ সফল হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিবে। সুতরাং এটি কোন পরামর্শ না , আপনি যদি সফল উদ্যোক্তা হতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে লক্ষ্য নির্ধারণ করতেই হবে ।
আরিয়ানা হাফিংটন

“আমাদেরকে মেনে নিতে হবে যে আমরা সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না মাঝেমধ্যে আমরা এটার বিপরীতটাও করি বুঝতে হবে ব্যর্থতা সাফল্যের বিপরীতে নয় বরং ব্যর্থতার সফলতার একটি অংশ”
ব্যর্থতার স্বাদ আরিয়ানা একা পান নাই ওয়াল্ট ডিজনিরও অনুরূপ কাহিনী রয়েছে, তাকে তার প্রথম অ্যানিমেশনের কাজ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল তাঁকে বলা হয়েছিল যে তার ভিতরে নতুনত্বের কিছু নাই এবং ক্রিয়েটিভিটির কমতি আছে। আমাদের চরম সৌভাগ্য যে ডিজনি হাল ছেড়ে দেননি।
কিভাবে আপনি ব্যর্থতার সাথে বন্ধুত্ব করবেন এখানে তার দরকারি কয়েকটি টিপস দেয়া রয়েছে ,
- প্রথমবারের উদ্যোগে সফল হওয়ার সম্ভাবনা কেবল ১৮% শতাংশ তবে আপনি যদি ব্যর্থ প্রকল্প থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আবার শুরু করতে পারেন তাহলে সে ক্ষেত্রে সফলতা সম্ভাবনা ২0%বেড়ে যাবে।
- ব্যর্থতাকে ভয় পাবেন না বরং ব্যর্থতা থেকে শিখে নতুন উদ্যমে নতুন কিছু শুরু করুন আপনি সবথেকে ভালো যে বিষয়টা জানেন সেটা দিয়ে শুরু করুন।
- প্রতিবার যখন আপনি ব্যর্থ হন চিৎকার করুন আপনার প্রতিক্রিয়া জানান (যেভাবে আপনার কাছে ভালো লাগে) ছোট্ট একটা ব্রেক নিতে পারেন তবে সেটা ১-২ দিনের বেশি নয় তারপর আবার ফিরে আসুন এবং আপনি যা শিখেছেন তার নোট তৈরি করুন যাতে আপনি এই ভুলগুলো আবার পুনরায় না করেন।
নিজেকে চ্যালেঞ্জ করুন

আপনি যদি সফল উদ্যোক্তা হতে চান তাহলে নিজেকে চ্যালেঞ্জ জানাতে হবে এটি করার জন্য কেউ আপনাকে প্রেসার দিবেনা কিন্তু এটি আপনাকেই করতে হবে,আপনাকে সব সময় নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ জয় করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
এই উদাহরণটি পড়ুন
শরীরে শক্তি বাড়ানোর জন্য আপনি জিমে জয়েন করছেন। আপনি প্রথম দিন যদি 2kg দিয়েও শুরু করেন তারপরেও আপনার কাছে মনে হবে এটা অনেক ভারী, কিন্তু আপনি যখন কয়েকদিন করতে থাকবেন তখন আপনার কাছে এটা খুব সহজ একটা বিষয় হয়ে যাবে।
তাহলে আপনি কি এখানেই থেমে থাকবেন?
না !
এখন আপনার সময় এসেছে ৫ কেজি ১0 কেজি ভারত্তোলন করে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করা আপনি যখন ১0 কেজি ভারত্তোলন করা শিখে যাবেন আপনার কাছে দুই কেজি ৫ কেজি কোন ব্যাপারই মনে হবে না। নিজেকে নতুন এবং কঠিন চ্যালেঞ্জ জানানো আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে ৫ কেজি ওজন যেমন ১0 কেজি ভারোত্তোলন এর পরে সহজ মনে হয়েছে।
ঠিক তেমনিভাবে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে সব সময় আপনাকে পরবর্তী কঠিন এবং বড় চ্যালেঞ্জ এর জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে।
নিজেকে বিশ্বাস করুন

আপনি যদি নিজেকে বিশ্বাস না করেন তবে কে করবে? একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার অর্থ হচ্ছে আপনি আপনার জ্ঞান-বুদ্ধির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নিতে শিখছেন। নিজের উপর আস্থা রাখার ক্ষমতা আপনাকে আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। মানুষ আত্মবিশ্বাসী লিডার অনুসরণ, বিশ্বাস করতে বেশি পছন্দ করে ।আপনি নিজের স্কিল এর উপরে কোনো উদ্যোগ শুরু করার পরেও আপনাকে কিছু সমস্যার ভিতরে পড়তে হবে আপনি যখনই অনিশ্চিত বোধ করবেন তখন মনে রাখবেন আপনার উদ্যোগ সম্পর্কে আপনার কতটুকু অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান রয়েছে। বেশিরভাগ উদ্যোক্তারা কোনো-না-কোনো অভিজ্ঞ লোকের সাথে কাজ করার পর তাদের নিজের উদ্যোগ শুরু করে। আপনার যখনি সাহায্যের প্রয়োজন হবে তখন আপনি আপনার মেন্টরের কাছ থেকে সহযোগিতা ,পরামর্শ নিতে পারেন। তবে অন্যের কাছ থেকে সহযোগিতা না নিয়ে নিজের সিদ্ধান্তকে বিশ্বাস করতে শিখতে হবে যদি নিজেকে বিশ্বাস করতে শিখতে পারেন তাহলে ইতিমধ্যেই আপনি সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পথে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছেন ।
শিখুন এবং তৈরি করুন

একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে আপনাকে সব সময় নতুন কিছু শেখার মানসিকতা রাখতে হবে। একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে আপনাকে সর্বদাই নতুন কিছু শিখতে হবে এবং নতুন কিছু তৈরি করতে হবে,সৃজনশীল এবং নতুন কিছু শিখার জন্য টেলিভিশন সোশ্যাল মিডিয়া এবং মুভি দেখা থেকে বিরত থাকুন এই ধরনের বিনোদন আমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করবে নতুন কিছু শিখতে তেমন কোন সহযোগিতাই করবে না। পরিমিতরূপে সবকিছু অনুসরণ করতে পারেন তবে সাধারণভাবে এই বিনোদনের মাধ্যম গুলো উদ্যোক্তাদের সময় নষ্ট করে ।আপনার বিনোদনের সময় সীমাবদ্ধ করা এটি একটি ত্যাগ, যা সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য অবশ্যই করা উচিত। টিভি এবং সিরিয়াল দেখার পরিবর্তে আপনার ইন্ডাস্ট্রি ফলো করে কেস স্টাডি পড়ুন, গঠনমূলক উপায়ে আপনার মন এবং শরীরের যত্ন নিন। একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য বিনোদনের মাধ্যমগুলো শিথিল করে কিভাবে আরো নতুন কিছু শেখা যায় নতুন কিছু তৈরি করা যায় তার প্রতি মনোযোগী হন।
ঝুঁকি নিতে হবে

সাধারণত মানুষ ঝুঁকি নিতে খুব বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। সবাই চায় একটা সিকিউর লাইফ কিন্তু একজন উদ্যোক্তা হওয়ার একটি বড় অংশ হচ্ছে আপনাকে আপনার ব্যবসায় ঝুঁকি স্বীকার করে নিতে হবে |
সফল উদ্যোক্তা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে এটা কাজেরই একটি অংশ।সকল উদ্যোক্তারা জানেন যে কোন কোন ঝুঁকি নিতে হবে এবং কোনগুলো নিতে হবে না। আপনার ব্যবসায় যে যে ঝুঁকি রয়েছে সেগুলো শনাক্ত করতে হবে এবং সেগুলো মেনে নিতে হবে | কি কি ঝুঁকি গ্রহণযোগ্য এবং কিভাবে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়া যায় তা আপনাকে শিখতে হবে এবং শিখুন।
জিজ্ঞাসা করুন
সব বিষয়ে আপনার জ্ঞান থাকবে এবং এটা কোনভাবেই সম্ভব না ।একজন মানুষ কখনই সবকিছু জানতে পারেনা | সুতরাং আপনার যা কিছু জানার দরকার আপনি অভিজ্ঞদের কাছ থেকে প্রশ্ন করে করে জিজ্ঞেস করে নিতে পারেন, এতে আপনার ইনফরমেশন কালেক্ট হবে। আপনার ব্যবসা সম্পর্কে যত বেশি ইনফরমেশন আপনার কাছে থাকবে আপনি তত বেশি আত্মবিশ্বাসের সাথে আপনার ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন। প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করাটা আপনাকে একটি শেখার মানসিকতা তৈরি করতে সাহায্য করবে,যারা প্রতিনিয়ত শিখতে থাকে তাদের সফল উদ্যোক্তা হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি ।

সাফল্য কখনোই রাতারাতি আসে না। সাফল্য দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফসল, আমি যে টিপস গুলো আপনাকে দিয়েছি এগুলো আপনাকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে সহযোগিতা করবে। একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়া কখনোই সহজ কাজ নয়। আমি আশা করছি আমার টিপসগুলো আপনাকে কিছুটা সাহায্য করবে।
No money but i want to earn.how do i earn