সুস্থ থাকার উপায়,সুস্থ থাকার দৈনন্দিন রুটিন

11 Oct

সুস্থ থাকার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। বর্তমান সময়ে আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত কারণে নানা ধরনের সমস্যায় ভুগছে মানুষ। এর পাশাপাশি আরও আছে প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনা। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি ভালো না থাকে তাহলে তাহলে আমাদের শরীর নানা ধরনের রোগ ব্যাধিতে সহজেই আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তাই এই কঠিন সময় আমাদের শারীরিক সুস্থতা অত্যন্ত প্রয়োজন।
আর শুধুমাত্র করোনা ভাইরাসই নয়, অন্য যে কোন ভাইরাস প্রতিরোধে কিংবা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আমাদের সবার আগে প্রয়োজন প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। আজ আমরা আলোচনা করব কিভাবে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তথা ইমিউনিটি বাড়াতে পারি।
কিছু খাবার আছে যেগুলো গ্রহণ করলে আপনার ইমিউন সিস্টেম আরও বেশি শক্তিশালী হবে। যদি আপনি এমন কিছু উপায় খুঁজে থাকেন কিভাবে সর্দি কাশি বা অন্যান্য ইনফেকশন প্রতিরোধ করা যায় তবে আপনার প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করার অভ্যাস গড়ে তোলা। আসুন জেনে নেই কিভাবে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করার মাধ্যমে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবেন-

প্রোটিন জাত খাবার

প্রোটিন এমন একটি পুষ্টিকর উপাদান যা আমাদের দেহের পরিপূর্ণ বৃদ্ধি, মানসিক বিকাশ ও পেশী গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিনের অভাব আমাদের শরীরকে অত্যন্ত দুর্বল করে তোলে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়, যেকোনো ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আমাদের শরীর আক্রান্ত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতিটি মানুষের তার শরীরের ওজন অনুযায়ী প্রোটিনের প্রয়োজন হয়, যদি আপনার ওজন হয় 60 কেজি তাহলে আপনার 60 গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন হবে। চলুন দেখা যাক কোন কোন খাবারগুলো খেলে আমাদের শরীরে প্রোটিনের অভাব সহজেই দূর করা যাবে এবং শরীর সুস্থ থাকবে-

ডিম: ডিম পৃথিবীর সবচাইতে সহজলভ্য এবং সবচেয়ে ভালো প্রোটিনের উৎস। প্রতিদিন কমপক্ষে দুটি ডিম খেলে প্রোটিন ক্যালসিয়াম ভিটামিন বি সহ অন্যান্য অনেক পুষ্টি উপাদান পাওয়া যাবে যা আমাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিমে প্রোটিন থাকে তবে বিশেষ করে সাদা অংশতে তাই ডিম বেশি করে খাবেন।

মাংস: মাংসের মধ্যে মুরগির মাংস বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। মুরগির মাংসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে, তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রোটিনের উৎস হিসেবে মুরগির মাংস রাখা উচিত। এর পাশাপাশি মাঝেমধ্যে অন্যান্য রেড মিট যেমন গরু অথবা খাসির মাংসও খেতে পারেন।

মাছ: মাছ একটি সহজলভ্য কিন্তু উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ স্বল্প ফ্যাট যুক্ত উপকারী মিনারেলস ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ একটি খাবার। মাছে ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড থাকে যা আপনার হার্টের জন্য খুব উপকারী। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মাছ থাকা উচিত। এক্ষেত্রে সামুদ্রিক মাছ ও দেশীয় মাছ মিক্স করে ডায়েট চার্ট বানাতে পারেন।

উপরের এই খাবারগুলো ছাড়াও আরো কিছু খাবার আছে যেগুলোতে অনেক বেশি পরিমাণে প্রোটিন থাকে যেমন: চিনাবাদাম, কাজুবাদাম, কুমড়োর বীজ, মসুর ডাল, মটর-শুঁটি, সূর্যমুখীর বীজ ইত্যাদি।

সুস্থ থাকতে যেসব সবজি খাবেন

শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণ উপকারী ভিটামিন ও মিনারেলস থাকে এবং এর পাশাপাশি আরো থাকে সীমিত ক্যালরি ও প্রচুর নিউট্রিশনস। এছাড়াও সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে শরীরে রক্ত চলাচল ঠিক রাখতে, চোখ ভালো রাখতেও ডায়বেটিসের সম্ভবনা কমাতে সাহায্য করে। বেশি করে সবুজ শাকসবজি খান, সবুজ শাক যেমন পুই শাক, পালং শাক, কচু শাক কুমড়া শাক ইত্যাদি আর এর পাশাপাশি অন্যান্য সবজি যেমন টমেটো, শশা, ফুলকপি, পাতাকপি, শিম, বেগুন, বরবটি, আলু, পটোল, গাজর, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি নিয়মিত খেতে পারেন।

মাটির নিচে জন্মানো মসলাজাতীয় খাবার

মাটির নিচে যে সমস্ত মসলাগুলো জন্মায় তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। যেমন পেঁয়াজ, আদা, রসুন হলুদ প্রভৃতি। এই সমস্ত খাবার শুধু খাবারের স্বাদই বাড়ায় না এর পাশাপাশি আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি বাড়ায়। বিশেষ করে ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস উচ্চরক্তচাপ ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগ প্রতিরোধে এই ধরনের মসলাজাতীয় খাবার অনেক বেশি সাহায্য করে।
পেঁয়াজ ও রসুন সভ্যতার শুরু থেকেই ইনফেকশন প্রতিরোধে ব্যবহার করা হচ্ছে, নিম্ন রক্তচাপ প্রতিরোধে রসুন অনেক কার্যকরী। আমরা সাধারণত আদা সর্দি কাশিসহ অন্যান্য শ্বাসজনিত রোগ ব্যবহার করি, এটি অত্যন্ত উপকারী একটি মসলা ।

দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার

দুগ্ধজাত খাবার সমূহকে সাধারণত প্রোবায়োটিক ফুডস নামে অভিহিত করা হয়। এই ধরনের খাবার গুলো আমাদের পাকস্থলীতে উপকারী ব্যাকটেরিয়া গুলোকে বাঁচিয়ে রাখে, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ করে। দুগ্ধজাত খাবারের মধ্যে দুধ, দই, ঘোল, ছানা, পনির, মাখন ও মিষ্টি ব্যাপক প্রচলিত।
বিশেষ করে দুধ একটি সর্বগুণ সম্পন্ন খাবার, দুধে রয়েছে ক্যালসিয়াম পটাসিয়াম প্রোটিন ভিটামিন ডি এ ভিটামিন বি সহ আরো অনেক পুষ্টি উপাদান। দুধ আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অন্যতম একটি প্রধান উপাদান, তাই বেশি করে দুধ খান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান।
দুগ্ধজাত খাবার হিসেবে দই একটি সর্বজনস্বীকৃত সুখাদ্য। দইয়ে প্রচুর পরিমাণে ভালো ব্যাকটেরিয়া আছে যেগুলো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এর পাশাপাশি ভিটামিন ডি এর একটি ভালো উৎস। চেষ্টা করবেন যাতে অরিজিনাল দই সংগ্রহ করতে পারেন, কারণ বাজারে যেসব দই পাওয়া যায় তা অনেক বেশি চিনি দিয়ে তৈরি করা হয়। এর চাইতে বরং নিজে দই বানিয়ে অথবা ভালো দই সংগ্রহ করে সেখানে মিষ্টি ফল অথবা মধু দিয়ে খেতে পারেন।

বাদাম খান প্রতিদিন

বাদামে রয়েছে ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, ওমেগা-থ্রি, ফ্যাটি এসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ আরো অনেক স্বাস্থ্যকর উপাদান। এছাড়াও উপকারী ফ্যাট আর মিনারেলে পরিপূর্ণ থাকে বাদাম। তাই বাদাম খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও বাদাম ওজন মেইনটেইন করতে ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কার্যকরী।

দেশীয় ফলমূল

ফল আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী খাবার। আমাদের দেশে বিভিন্ন মৌসুমে নানা ধরনের দেশীয় ফল পাওয়া যায়। আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, ডাব, ডালিম, জলপাই, জামরুল, লিচু, তরমুজ, আমলকি, বেল প্রভৃতি এই ফলগুলো দামে যেমন সস্তা তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। আমাদের দেশীয় ফলগুলোতে থাকে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলসহ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ যা শরীরে মেদ জমতে দেয় না। ফল সম্পূর্ণই একটি প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ার কারণে ফল আমাদের অনেক বেশি এনার্জি দেয় এবং এটি বেশ মুখরোচক হওয়ায় সবাই ফল খেতে পছন্দ করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির অন্যতম উপায় নিয়মিত দেশীয় ফলমূল খাওয়া।

রোগ প্রতিরোধে বিশুদ্ধ পানি

সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সবার শেষে বলছি দেখে হয়তো আশ্চর্য হতে পারেন।
কথায় আছে, “পানির অপর নাম জীবন”। পানি ছাড়া পৃথিবীর কোন জীব বেঁচে থাকতে পারে না। আমাদের দেহের তিন ভাগের দুই অংশ পানি দ্বারা পরিপূর্ণ, তাই বুঝতেই পারছেন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত বিশুদ্ধ পানি পান করলে কিডনিজনিত রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। এছাড়াও ডিহাইড্রেশন, কনস্টিপেশন অন্যান্য রোগবালাই থেকে দূরে থাকতে পারবেন। মনে রাখবেন সুস্থতার জন্য বিশুদ্ধ পানির কোন বিকল্প নেই।

উপরে উল্লেখিত খাবারগুলো নিয়মিত খাবার খাওয়ার পাশাপাশি কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো আপনাকে এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন: অতিরিক্ত চিনিযুক্ত জাতীয় সব ধরনের খাবার, অতিরিক্ত লবণ জাতীয় খাবার, পোড়া তেলে ভাজা ভাজা খাবার, কোমল পানীয়, ফাস্টফুড ইত্যাদি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো অতিরিক্ত খেলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।
পরিশেষে বলা যায়, শরীরকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা অপরিহার্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *