জাপান পূর্ব এশিয়ার একটা অপূর্ব সুন্দর দ্বীপরাষ্ট্র। দেশ হিসেবে জাপান বিশ্বব্যাপী শিষ্টাচার, সভ্যতা ও সুস্থ সংস্কৃতির ধারক-বাহক হিসেবে পরিচিত। কঠোর পরিশ্রমী জাপানিরা বর্তমানে সকল ক্ষেত্রেই অনেক বেশি এগিয়ে অন্যান্যদের তুলনায়। বিখ্যাত এই দেশ সম্পর্কে আমরা কতটা জানি? আসুন আজ জেনে নিই জাপান সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

১. জাপান পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ দেশগুলোর একটি।
নিরাপদ দেশের তালিকায় জাপানের স্থান একেবারে উপরের দিকে থাকে। জাপানে গেলে আপনি দেখবেন মানুষ ফোন, ল্যাপটপ কিংবা অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র সামনে রেখেই বাসে অথবা ট্রেনে ঘুমিয়ে পড়ছে। কারো কোনো জিনিস চুরিও হয়না সেখানে। জাপান এতোটাই নিরাপদ যে, মানুষ ঘরের দরজা লক না করে অফিসে চলে গেলেও সামান্য চিন্তিত হয়না।

২. জাপানের দ্বীপসংখ্যা ৬৮৫২!
আগেই বলেছি জাপান একটা দ্বীপবেষ্টিত দেশ। ৪ টা বড় দ্বীপই মূল ভূখন্ড হিসেবে ৯৭% জায়গা দখল করে আছে, আর বাকী অসাধারণ সুন্দর সুন্দর দ্বীপ গুলো পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ।
৩. বছরে দেড় হাজারের বেশি ভূমিকম্প হয় জাপানে!
ভূমিকম্পের দেশ হিসেবে জাপানের নাম সাধারণ জ্ঞানের বইয়ে নিশ্চয়ই পড়েছেন। জাপানে এতোগুলো ভূমিকম্প হওয়ার পরেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক কম থাকে কারণ বেশিরভাগই অতটা জোরালো হয়না। তবে বছরে এক-দু বার ৮ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্পও হয় জাপানে! ভুমিকম্প থেকে রক্ষা পেতে কাঠের বাড়ি নির্মাণ করা হতো জাপানে।
৪. গিফট হিসেবে ফল দেওয়া জাপানে বহুল প্রচলিত।
এমনিতে জাপানে ফলমূলের দাম এখন বেশ সস্তা, তবে ঐতিহ্য হিসেবে প্রিয় মানুষদের জন্য ফলমূল নিয়ে যাওয়া এখনো বেশ প্রচলিত জাপানে।

৫. খাবার উপভোগ করে খায় জাপানিরা।
আপনার কাছে কারো খাওয়ার শব্দ বিরক্তিকর হতে পারে কিন্তু শব্দ করে খাওয়া জাপানে ভালো চোখে দেখা হয়।
জাপানিজ প্রথা অনুযায়ী যদি আপনি শব্দ করে খাবার শেষ করেন তাহলে এটা খাবারের প্রতি আপনার ভালো লাগার বহিঃপ্রকাশ।
৬. জাপানিরা ট্যাটু পছন্দ করে না।
আপনার অনেক শখের ট্যাটু নিয়ে জাপানে বেড়াতে গেলে বিড়ম্বনায় পড়বেন। ওদের অনেক গুলো জায়গায় ট্যাটু নিয়ে ঢোকা যায়না। জাপানিরা ট্যাটুকে গ্যাং আর সন্ত্রাসের সাথে মিলিয়ে দেখে। ট্যাটু নিয়ে আপনি ঝর্ণায় গোসলও করতে পারবেন না।
অবশ্য এখন একধরনের স্টিকার পাওয়া যায় ওইখানে যেটা আপনার ট্যাটু ঢেকে দিবে আর আপনি অবাধে জাপান উপভোগ করতে পারবেন।
৭. জাপানে শিক্ষার হার প্রায় শতভাগ!
জাপানিরা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত জাতি হিসেবে সুপরিচিত। পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি সেখানে হাতেকলমে শিক্ষার উপর ব্যাপক জোর দেওয়া হয়। আর তাদের শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হয়।
৮. জাপানে স্কুল থেকেই পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা শেখানো হয়।
স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাই স্কুল পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ করে। এতে তাদের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই কাজের প্রতি অনীহা দূর হয়। জাপানি দর্শকরা বিশ্বকাপে হেরে যাওয়ার পরও স্টেডিয়াম পরিস্কার করে সবাইকে অবাক করেছিল। সেই শিক্ষাটা তাদের ছোট থেকেই দেওয়া হয় জাপানের প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
৯. সবচেয়ে বেশি মাছ খায় জাপানিরা!
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মাছ খায় জাপানিরা। বছরের প্রায় দুই কোটি টন মাছ খাওয়া হয় জাপানে। এতো পরিমাণ মাছের সবটাই তারা নিজেরাই আহরণ করে।
১০. সুইসাইড জাপানের অন্যতম সমস্যা!
সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা প্রবণ দেশগুলোর অন্যতম জাপান। সুখী-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে এতো নামডাক থাকার পরও তারা মানসিক স্বাস্থ্যের দিক থেকে বেশ পিছিয়ে। বছরে প্রায় ২০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে জাপানে!

দেশ হিসেবে জাপানের উন্নতি অন্য যেকোনো দেশের জন্য অনুসরণীয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে নৃশংস পারমাণবিক হামলার শিকার হয়েও জাপান যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তা নিঃসন্দেহে অভাবনীয় একটা ব্যাপার। আশা করি জাপান সম্পর্কে এই তথ্যগুলো আপনার ভালো লেগেছে এবং সামান্য হলেও দেশটির প্রতি আপনার আগ্রহ বাড়িয়েছে। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।